ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং হচ্ছে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল বাজার৷বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ভুবনে তরুণদের কাছে বহুল আলোচিত বিষয় এটি। পড়ালেখা শেষে বা পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং করে যে কেউ গড়ে নিতে পারেন নিজের ভবিষ্যত্ ক্যারিয়ার৷
আউটসোর্সিং এর সংজ্ঞাঃ
ব্যবসা ক্ষেত্রে, আউটসোর্সিং বলতে কোন একটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়াকে বুঝায়। "আউটসোর্সিং" এর ধারনাটি এসেছে আমেরিকান শব্দ 'outside resourcing'' থেকে। আউটসোর্সিং তথা ফ্রিল্যান্সিং শব্দের মূল অর্থ হল মুক্ত পেশা। অর্থাৎ মুক্তভাবে কাজ করে আয় করার পেশা। আর একটু সহজ ভাবে বললে, ইন্টারনেটের ব্যাবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে এসব কাজ করানোকে আউটসোর্সিং বলে। যারা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে দেন, তাঁদের ফ্রিল্যান্সার বলে।
কেন আউটসোর্সিং-
অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে, যেমন… কোয়ালিটি কাজ প্রয়োজন, মজুরির হার কমানো, টিমে এক্সপার্ট লোক না থাকা, সময় সেভ করা, নিজের কাজের চাপ কমানো, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং নিত্য অফিস খরচ হ্রাস করতে এবং হায়ার অপর্চুনিটি কাজে লাগাতে আউটসোর্স করা হয়। এছাড়া কোম্পানিগুলো সাধারণত আউটসোর্সিং করে উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য। অনেক সময় পর্যাপ্ত সময়, শ্রম অথবা প্রযুক্তির অভাবেও আউটসোর্সিং করা হয়।
কাজের ধরনঃ
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম, লেখা ও অনুবাদ, প্রশাসনিক সহায়তা, ডিজাইন, মাল্টিমিডিয়া, গ্রাহকসেবা, বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসা সেবা ইত্যাদি। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট-এ রয়েছে ওয়েবসাইট ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং, ই-কমার্স, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন, ওয়েবসাইট টেস্টিং-প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। সফটওয়ার ডেভেলপমেন্টের মধ্যে ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশন, গেম ডেভেলপমেন্ট, স্ক্রিপ ও ইউলিটি, সফটওয়ার প্লাগ ইনস, মোবাইল আইপ্লকেশন, ইন্টারফেস ডিজাইন, সফটওয়ার প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, টেস্টিং ও ভিওআইপি। নেটওয়ার্কিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডিবিএ ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইআরপি/সিআরপি ইত্যাদি। লেখালেখি ও অনুবাদ কাজের জন্যে রয়েছে কারিগরি নিবন্ধন লেখা, কপি অনুবাদ, ক্রিয়েটিভ রাইটিং, আর্টিকেল রাইটিং, ওয়েভসাইট কনটেন্ট, ব্লগ ইত্যাদি। ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়ার মধ্যে রয়েছে- গ্রাফিকস ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন, প্রিন্ট ডিজাইন, থ্রিডি মডেলিং, ক্যাড, অডিও ও ভিডিও প্রোডাকশন, ভয়েস ট্যালেন্ট, অ্যানিমিনেশন ইত্যাদি।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারা মূলত সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট, কাস্টমার সার্ভিস, ডাটা এন্ট্রি, রাইটিং, সম্পাদনা, ব্লগিং, একাউন্টিং, মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজশেন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রেজেটেশন থ্রিডি ডি মডেলিং, এনিমেশন এবং অনুবাদের কাজ বেশি করছে।
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এবং ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) হচ্ছে যখন কোন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ না করে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাজ করে থাকেন। অর্থাত গতানুগতিক চাকুরীর বাইরে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার স্বাধীনতা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আর ফ্রিল্যান্সার হচ্ছেন এমন একজন ব্যাক্তি যিনি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি ছাড়া কাজ করেন। আউটসোর্সিংয়ে এই ফ্রিল্যান্সারগন কাজ করে থাকে। একজন ফ্রিল্যান্সারের যেরকম রয়েছে কাজের ধরণ নির্ধারণের স্বাধীনতা, তেমনি রয়েছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা। গতানুগতিক অফিস সময়ের মধ্যে ফ্রিল্যান্সার স্বীমাবদ্ধ নয়। প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েবসাইট, গেম, 3D এনিমেশন, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সফ্টওয়্যার বাগ টেস্টিং, ডাটা এন্ট্রি - এর যেকোন এক বা একাধিক ক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার কাজ করে থাকেন।
ফ্রিল্যান্সিং-এর ইতিহাস
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং-এর ইতিহাস খুব বেশি পুরানো নয়। গত তিন-চার বছরে এই পেশা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কাজটা শুরু করেছিল বিডিওএসএন, তারপরে বেসিস থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের অ্যাওয়ার্ড দেওয়ায় সেটা অন্য মাত্রা পায়।
কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফ্রিল্যান্সিং-এর ধারণাটি আগে থেকেই ছিল। এর সুচনা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। “GURU” –সর্বপ্রথম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যা ১৯৯৮ সালে SOFTmoonlighter.com হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় পরে Elance.com, RentAcoder.com, Odesk.com, GetAFreelancer.com, Freelancer.com, Limeexchange.com সহ আরো অনেক মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠিত হয়।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মধ্যে মূলত পার্থক্য
ফ্রীল্যান্স বা মুক্ত পেশা, ফ্রীল্যান্সার যিনি মুক্ত পেশাজীবী। এটা একজন মানুষ কর্তৃক কর্মকান্ড যার নির্ধারিত কোন নিয়োগকর্তা থাকেনা। একজন মুক্ত পেশাজীবী একইসাথে একজন স্ব-নিযুক্ত কর্মজীবী বা পেশাজীবী। আর আউটসোর্সিং হচ্ছে সেইসব মুক্ত পেশাজীবীদের কাজের উতস, যেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করে বিভিন্ন মুক্ত পেশাজীবীদের কাছ থেকে ঠিকাদারী (bid) পদ্ধতিতে চুক্তিবদ্ধ করে মূল কাজটি সমন্বয় এবং সম্পন্ন করে এবং এটা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। ফ্রীল্যান্সিং একটি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া।
আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং শব্দ দুটি আমরা একই জিনিস বুঝলেও, অর্থ এবং কার্যগত পার্থক্য রয়েছে। আউটসোর্সিং (Outsourcing) মানে নিজের কাজ কোন একটা মাধ্যমে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়া। আর ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) বলতে, মুক্ত বা স্বাধীনভাবে কাজ করা বোঝায়। অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি হচ্ছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনি অন্যের কাজ করে দিবেন এবং কাজের বিনিময়ে নির্দিষ্ট অর্থ পাবেন। অনলাইনে কাজ করার জন্য অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে Freelancer, (Elance)ইল্যান্স এবং (oDesk)ওডেস্ক এর মধ্যে অন্যতম।
ফ্রিল্যান্সিং শুরুর পূর্বে
ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাইলে ৫টি কথা মাথায় রাখতে হবে; সঠিক গাইডলাইন, সঠিক প্রশিক্ষন, সঠিক পরিশ্রম, নিজের অধ্যবসায় এবং নিজের চেস্টা।
যে কোন কাজ শুরু করতে চাইলেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতার প্রয়োজন সর্ব প্রথম। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে হলেও আপনাকে যেকোন একটি ফিল্ডে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ইন্টারনেটে কোনো কাজ করতে হলে অবশ্যই কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের বেসিক ব্যবহার জানা অত্যাবশ্যক। কম্পিউটারের বেসিক হিসেবে আপনাকে জানতে হবে এমএসওয়ার্ড, এমএসএক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি আর ইন্টারনেটে কিভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে হয়, মেইলিং এবং ওয়েবসাইট ন্যাভিগেশন সম্পর্কেও জানতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে আরও একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে কমিউনিকেশন। এর জন্য ইংরেজিতে দক্ষতাটাও দরকার। ইংরেজিতে যদি খুব ভালো হন তাহলে ব্লগিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।
আপনার যদি আঁকাআঁকি ভালো লাগে/ক্রিয়েটিভিটি থাকে তাহলে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারেন। আবার আপনার যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের বেসিক নলেজ থাকে তাহলে আপনি ওয়েব ডিজাইন শিখতে পারেন।
আপনি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং সিএমএস ভিত্তিক কোর্স ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারেন।
মোটামুটি পরিশ্রমী হলে আপনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অথবা ইমেইল মার্কেটিং কোর্স করতে পারেন।
বিশ্বের প্রচুর ছেলে ও মেয়ে আউটসোর্সিং এর কাজ করে আত্ম-নির্ভরশীল হয়ে তাদের সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলিতে অসংখ্য কাজ প্রতিদিন পাওয়া যায়। আর প্রতিদিন অসংখ্য এসইও’র কাজ ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলিতে জমা হচ্ছে। এসইও’র চাহিদা সবসময়ই থাকবে। তাই এসইও এর কাজ শিখতে হবে।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে পাঁচ শতাধিক ধরণের কাজ রয়েছে, পছন্দমতো যেকোনো একটিকে বেঁছে নিতে হবে আপনাকে। আর ক্যারিয়ারের ফিল্ড পছন্দের ক্ষেত্রে ঐ কাজের প্রতি আপনার আকর্ষন আছে কিনা, ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবেন কিনা, ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে এরকম সংশ্লিস্ট কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। সিদ্ধান্তে আসার পর শুরু হবে মূল কাজ, স্কিল ডেভেলপমেন্ট। স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন রিসোর্স থেকে শেখা যেতে পারে।
অনলাইন রিসোর্স গুলো স্টেপ বাই স্টেপ পাওয়া যায়না বিধায় নতুনরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না। ভালোভাবে শিখতে হলে কিংবা দ্রুত সফল হতে হলে এই সেক্টরে যারা সফল তাদের গাইডলাইন নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে ফ্রিল্যান্সারা বেশি সময় দিতে পারেন না। তাই যেসব ফ্রিল্যান্সারা প্রশিক্ষণ দেন তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং যতটা সহজ ভাবছেন ততটা সহজ নয়, এখানে আপনাকে আপনার দক্ষতার পাশাপাশি যোগ্যতাও প্রমাণ করতে হবে। আরও কয়েকটি গুন আপনার থাকতে হবে যেমন, পরিশ্রম করার মন মানুষিকতা, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্যশীলতা এবং সততা।
ভালোভাবে কাজ শেখা হয়ে গেলে অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সার, ইল্যান্সসহ এই ধরণের জনপ্রিয় সাইটগুলোতে কাজ করতে পারেন।
যেগুলো শিখতে হবে ফ্রিল্যান্সিং কাজের পূর্বে
অফিস কোর্স (২০০৭ বা ২০০৪)বিশেষ করে : Ms word. . বেসিক ইন্টারনেট
১) ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কি কি ধরনের কাজ কি পরিমানে আছে, আপনার জন্য উপযুক্ত কাজ কোনটি?
২) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কি কি প্রয়োজন এবং কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন।
৩) সঠিক ভাবে বিড করার কৌশল, প্রোফাইল ৯০%-১০০% ভাগ যেভাবে সম্পন্ন করবেন।
৪) upwork ও freelancer.com এর বিভিন্ন অংশের পরিচিতি।
৫) ওয়েব-সাইট কম্পিটিটর এনালাইসিস এবং গুগোল এডসেন্সের মাধ্যমে আয়ের উপায়।
৬) ওয়েব ডেভলপমেন্ট, গ্রাফিক্স, লোগো ডিজানিং, ইমেজএডিটিং এর মধ্যামে আয়ের উপায়।
৭) আপনার প্রোফাইল এর পোর্টফোলিও পেজটি যেভাবে পরিপুর্ন করবেন।
৮) ব্লগস্পট সাইটে যেভাবে আয় করবেন।
৯) কভার লেটারএবং ওয়ার্কসাবমিশন
আউটসোর্সিং কাজ পাওয়ার টিপস
অনলাইনে সহজে আউটসোর্সিংয়ের কাজ পেতে কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই চলে। নিচে সে রকম কিছু কৌশল দেওয়া হলো।
· অনলাইনে কাজ পাওয়াটা নির্ভর করে কাজের মূল্যের উপর। অর্থাত আপনি কত কম মূল্যে (রেটে) আবেদন করেছেন তার ওপর।
· যেসব বায়ারের পেমেন্ট মেথড ভেরিফায়েড তাদের নিকট থেকে কাজ পাবেন আশা করা যায়। সুতরাং খেয়াল রাখতে হবে বায়ারের পেমেন্ট মেথড ভেরিফায়েড কিনা।কোনো কনট্রাক্টরকে (ফ্রিল্যান্সার) ভাড়া বা হায়ার করতে হলে তার পেমেন্ট মেথড ভেরিফায়েড থাকতে হয়।
· কোনো একটা জব পোস্ট করার পর যত তাড়াতাড়ি সেটিতে আবেদন করবেন ততই ভালো।
· আপনি যত বেশি সময় অনলাইনে (ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে) থাকবেন ততই আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ কিছু কিছু কাজ আছে, যেগুলো পোস্ট করার এক-দুই ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন করে জমা দিতে হয়। যেমন ফেসবুকে বা অন্য কোনো সাইটে ভোট দেওয়া এবং কিছু ভোট সংগ্রহ করে দেওয়া; আবার হঠাৎ করে কোনো ওয়েবসাইটে সমস্যা হয়েছে তা ঠিক করে দেওয়া ইত্যাদি। কাজেই শুরুতে বেশি সময় অনলাইনে থাকার চেষ্টা করুন। যাতে বায়ার আপনাকে কোনো বার্তা পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রত্যুত্তর দিতে পারেন।
· মার্কেটপ্লেসগুলোতে দেখবেন প্রতি মিনিটে নতুন নতুন জব পোস্ট করা হচ্ছে,সেগুলোতে আবেদন করুন। যেসব জবে কোনো কনট্রাক্টরের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে,সেসবে আবেদন না করাই ভালো। কারণ বায়ার যদি এদের মধ্য পছন্দের কনট্রাক্টর পেয়ে যায় তাহলে আর অন্য কনট্রাক্টরের প্রোফাইল চেক করে দেখবে না।
· যেসব জবে শর্ত দেওয়া আছে এবং সেগুলো যদি আপনি পূরণ করতে না পারেন তাহলে আবেদন না করাই ভালো।
যাঁরা ওডেস্কে দুই-তিনটা কাজ করেছেন,এখন বেশি মূল্য হারে আবেদন করতে চান, তাঁরা যে জবটিতে আবেদন করবেন সে জবের নিচে দেখুন বায়ারের আগের জবগুলোর তালিকা দেওয়া আছে। সেখানে যদি দেখেন বায়ার তাঁর আগের জবগুলোতে বেশি ডলার দিয়ে অন্য কনট্রাক্টরকে কাজ করিয়েছেন,তাহলে আবেদন করতে পারেন। আর যেসব বায়ার আগের জবগুলোতে বেশি ডলারে কাজ করায়নি, তাদের জবে বেশি রেটে আবেদন না করাই ভালো।
ফ্রিলেন্সার হিসেবে অর্থ আয় করার ৫টি ধাপ
ফ্রিলেন্সিং পেশায় সাফল্য পেতে আপনাকে যা যা করতে হবে:
১। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করার চেষ্টা করুনঃ আপনি যদি বড় বড় ফ্রিলেন্সিং সাইট সমূহ যেমন Freelancer.com, Elance.com, Guru.com and UpWork.com ইত্যাদির কাজ অফার দেখেন তবে দেখবেন সেখানে বেশীরভাগ কাজ হচ্ছে ওয়েভ ডেভেলপমেন্টের কাজ। অতএব আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ জানে ফ্রিলেন্সিং পেশায় আসেন তবে ভালো আয় করতে পারবেন।
২। প্রোগ্রামিং এর কাজঃ ফ্রিলেন্সিং পেশায় ২য় বেস্ততম পেশা হচ্ছে প্রোগ্রামিং। নানান রকম প্রোগ্রামিং এর কাজের জন্য নানান ইস্কিলের লোক প্রয়োজন হয় প্রোগ্রামিং এর কাজে। আপনি যদি প্রোগ্রামিং জানেন এবং প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের সাথে ভালভাবে পরিচিত হন তবে ফ্রিলেন্সিং করে আপনার পক্ষে ভালো অর্থ আয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। আপনাকে প্রোগ্রামিং এর যে সব ল্যাংগুয়েজ এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছেঃ Java programming, Visual Basic programming, .Net programming, C++ programming।
৩। গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজঃ আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ জানেন তবে ফ্রিলেন্সিং এ আপনি প্রচুর কাজ পাবেন। পৃথিবী জুড়ে মানুষ গ্রাফিক্স সম্পর্কিত নানান কাজ করাছে যেমন লোগো ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, টি- শার্ট ডিজাইন ইত্যাদি। আপনার যদি ভালো গ্রাফিক্স ডিজাইনের দক্ষতা থাকে তবে আপনি ফ্রিলেন্সিং করে ভালো আয় করতে পারবেন।
৪। লেখা লিখির কাজঃ ফ্রিলেন্সিং জগতে নানান কাজের মাঝে লেখা লিখি যেমন ব্লগে আর্টিকেল লিখা, এসইও ডাইরেক্টরি আর্টিকেল লিখা, ক্রিয়েটিভ আর্টিকেল, একাডেমিক আর্টিকেল লিখা ইত্যাদি। আপনার যদি লেখালিখিতে ভালো আয়ত্ত থাকে তবে আপনি এর থেকেও ভালো উপার্জন করতে পারবেন।
৫। ডেটা এন্ট্রি কাজঃ বাংলাদেশ বর্তমানে ফ্রিলেন্স ডেটা এন্ট্রি সেক্টরে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক ফ্রিলেন্সার বিদেশীদের সাথে তাল মিলিয়ে ভাল আয় করে নিচ্ছেন। এখনও এই সেক্টরে প্রচুর কাজ পাওয়া যাচ্ছে। আপনি যদি সফল ভাবে বিড করতে পারেন তবে আপনি ভালো ভালো কাজ পাবেন এবং নিজে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবেন।
কিভাবে শুরু করবেন
প্রথমে যে কোন একটি ফ্রিল্যান্সিং সাইটে রেজিস্ট্রশন করে নিতে হবে। রেজিস্ট্রশন করা সময় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, ইমেইল ইত্যাদি সঠিকভাবে দিতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের একটি ধাপে আপনার একটি প্রোফাইল/রেজ্যুমে তৈরি করতে হবে যেখানে আপনি কোন কোন ক্ষেত্রে পারদর্শী তা উল্লেখ করবেন। এখানে আপনি আপনার পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা, ওয়েবসাইট লিংক ইত্যাদি দিতে পারেন। পরবর্তীকালে এই প্রোফাইল কাজ পাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবার পর, এখন আপনি বিড করা শুরু করে দিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে প্রতি মূহুর্তে নতুন কাজ আসছে। আপনার পারদর্শীতা আনুযায়ী প্রতিটা কাজ দেখতে থাকুন। প্রথম কয়েক দিন বিড করার কোন প্রয়োজন নেই। এই কয়েকদিন ওয়েবসাইটি ভাল করে দেখে নিন। ওয়েবসাইটের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন এবং সাহায্যকারী আর্টিকেল পড়ে ফেলতে পারেন। প্রথমদিকে কাজ পাওয়া সহজ নয়। তাই আপনাকে ধৈর্য্য সহকারে বিড করে যেতে হবে। প্রথম কাজ পেতে হয়ত ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। কয়েকটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আপনাকে ক্লায়েন্টরাই খুজে বের করবে।
ফ্রিল্যান্সিং কাজ যেভাবে হয়
যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি (Employer) তার কোনো কাজ আউটসোর্সিং করাতে চান, তাহলে তিনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এসে সেই কাজটির জন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে বিড (Bid) আমন্ত্রন করেন। একটি বিডের মধ্যে একজন ফ্রিল্যান্সার উল্লেখ করেন যে তিনি কত দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারবেন, এজন্য তার পারিশ্রমিক কত হবে। এভাবে একটি কাজের যে কয়টি বিড হয় সেগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে যোগ্য এবং সুবিধাজনক বিডটিকে Employer নির্বাচন করেন। এরপর সেই ফ্রিল্যান্সারের সাথে তিনি যোগাযোগ করেন এবং কাজের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কাজ শেষে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পে-মেন্ট করা হয়।
ক্লায়েন্ট পাবেন কিভাবে
ফ্রিল্যান্সারগণ সবচেয়ে বেশি কাজ পান অন্য কারো রেফারেন্সের মাধ্যমে। আপনার যদি পরিচিত এমন কেউ না থাকেন যিনি আপনাকে রেফার করতে পারেন, তাহলে সুন্দর প্রোফাইল বানিয়ে, সঠিক টাকা বিড/ আওয়ারলী রেট নির্ধারণ করে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। প্রথম কাজ পাওয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল। আপনি ৩ দিনেও কাজ পেতে পারেন, আবার ৩ মাস-ও লেগে যাতে পারে। এটি আপনার ধৈর্যের একটি বড় পরীক্ষা। একবার কাজ পেয়ে গেলে, সেই কাজটি মন দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে শেষ করুন। এতে ক্লায়েন্ট খুশি হয়ে আপনাকে ভালো ফিডব্যাক দেবেন। পরবর্তীতে আপনি এই ক্লায়েন্টের কাছ থেকেই নতুন কাজ পেতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্যে দুটি পদ্ধতিতে জব পাওয়া যেতে পারে। যেমন- বিডিং সিস্টেম এবং নন-বিডিং সিস্টেম। বিডিং সিস্টেমে ওডেক্স, ফ্রিল্যান্স, ইল্যান্স ও স্ক্রিপটল্যান্সে কাজ পাওয়া যায়। তবে এ কাজ পাওয়াটা খুবই প্রতিযোগিতামূলক। কাজ পেতে হলে ইংরেজিতে এবং সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষতা থাকা অত্যাবশ্যক। নন-বিডিং সিস্টেমে মাইক্রোওয়ার্কস, মিউট ওয়ার্কস, মাই ইজি টাস্ক, জব বয়, পিটিসি, পিটিএস-এ কাজ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে গুগল এডসেন্সে কাজ করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।
কিভাবে বিড করবেন
প্রধানত দুই প্রকারে বিডিং করা হয়ঃ
· Project Fee: কোনো একটি প্রজেক্ট যখন মার্কেটপ্লেসে দেওয়া হয়, তখন আপনি পুরো প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে কত পারিশ্রমিক নিবেন তা নিয়ে বিডিং করতে পারেন।
· Hourly Rate: এই পদ্ধতিতে আপনি কোনো একটি প্রজেক্টের জন্য কাজ করতে প্রতি ঘন্টায় কত পারিশ্রমিক নেবেন, তা নিয়ে বিড করতে পারেন।
টাকা তুলবেন কিভাবে
১. Bank-to-Bank Wire Transfer: কিছু কিছু মার্কেটপ্লেস থেকে সরাসরি টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে সব মার্কেটপ্লেস থেকে এটি করা যায় না, সেক্ষেত্রে অনলাইনে টাকা লেনদেনের বিভিন্ন সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে প্রথমে আপনার অর্থটি ডলার হিসেবে মার্কেটপ্লেসে আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হবে। টাকা পাবার পর সেটি আপনি Skrill (প্রাক্তন Moneybookers) বা এ ধরনের কোনো মানি সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে মার্কেটপ্লেস ভেদে ট্রান্সফার ফি দিতে হতে পারে। এরপর Skrill থেকে সেই টাকাটি আপনি আপনার দেশের কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসতে পারবেন। এই ধাপে ব্যাংক আপনার কাছ থেকে আরেকটি ট্রান্সফার ফি কেটে নিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যাংকটির যেনো অবশ্যই একটি SWIFT Code থাকে। নতুবা আপনার টাকা Skrill থেকে ট্রান্সফার হবে না। পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম ট্রান্স্যাকশনের ক্ষেত্রে প্রায় এক মাস লাগে। পরবর্তী Transaction গুলো সাত দিনের মধ্যেই হয়ে যায়।
২. পেওনিয়ার কার্ড (Payoneer Card): নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে আপনি আপনার মার্কেটপ্লেস থেকে যেকোনো সময়ে অর্থ উত্তোলন করার জন্য একটি কার্ড পেতে পারেন। এটি এক রকম ডেবিট কার্ডের মত। এই কার্ড দিয়ে আপনি পৃথিবীর যেকোন স্থান থেকে ATM এর মাধ্যমে যেকোন সময়ে আপনার মার্কেটপ্লেসে জমানো টাকা তুলতে পারবেন। এই কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলনের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটাও করতে পারবেন। এমনকি এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থিত আপনার কোন আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব তাদের মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড থেকে আপনাকে টাকা পাঠাতে পারবেন।
৩. ক্লায়েন্ট এর নিকট থেকে সরাসরি ট্রান্সফারঃ যখন কেউ একজন আপনার রেগুলার ক্লায়েন্ট হয়ে যাবেন, তখন তার কাছ থেকে প্রজেক্ট পেতে আপনার আর মার্কেটপ্লেসে যেতে হবে না। তিনি সরাসরি আপনার সাথে ই-মেইল বা অন্য কোনো উপায়ে যোগাযোগ করে প্রজেক্ট দিবেন এবং প্রজেক্টের পে-মেন্ট আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ট্রান্সফার করবেন।
৪. বাংলাদেশে পেপাল কার্ড চালু হওয়ার কথা রয়েছে। খবরে প্রকাশ, সোনালী ব্যাংক ও পেপালের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ফ্রিল্যান্সিং / আউটসোর্সিং সাইট
UpWork
এই ওয়েবসাইটটি পূর্বে oDesk নামে পরিচিত ছিল, কিছুদিন পূর্বে UpWork এ পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু ফিচার| Elance নামক আরেকটি জব মার্কেট ও এর সাথে সংযুক্ত হয়েছে| UpWork ই বর্তমানে ফ্রিল্যান্স মার্কেট লিডার| এই ওয়েবসাইটে বায়াররা বিভিন্ন ধরনের জব পোস্ট করে থাকেন, ফ্রীলেন্সারগন তাদের স্কিল অনুযায়ী অ্যাপ্লাই করেন| বায়ার সব আবেদনকারী মধ্যে থেকে বাছাই করে ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেন| বেশিরভাগ ক্ষেত্রে UpWrok মেসেজ অথবা Skype chat এর মাধ্যমে ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেন, কিছু ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও এই প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়| এখানে আইটি সম্পর্কিত প্রায় সব রকম কাজ রয়েছে যেমনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং, ভিডিও প্রোডাকশন ,মার্কেটিং, ডাটা এন্ট্রি, রিসার্চ এর কাজ, অটো কেড এর কাজ ইত্যাদি।
Envato
এটি Passive Income এর জন্যে উৎকৃষ্ট Market-place. এই Marketplace-e বেশ কইয়েকটি প্লাটফর্ম আছে, যেখানে আপনি আপনার তৈরি করা কাজ বিক্রি করতে পারবেন , যা পরবর্তিতে বায়ার কিনে নিয়ে নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করবে| এই মার্কেটপ্লেসের বেশ কয়েকটি অংশ রয়েছে, কোন অংশে কি প্রোডাক্ট বিক্রয় করা যায় তা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলঃ
· Graphic River – ডিজাইন টেমপ্লেট বিক্রয় করতে পারবেন যেমনঃ টিশার্ট, পোস্টকার্ড, ব্রশিউর, বিজনেস কার্ড, ফ্লায়ার, লোগো, ব্যাকগ্রাউন্ড, ফন্ট, ফটোশপ ব্রাশ, টেক্সট ইফেক্ট ইত্যাদি|
· Code Canayan – ওয়েবওয়ার বিক্রয় করতে পারবেন, যেমনঃ পিএইচপি স্ক্রিপ্ট, ওয়ার্ডপ্রেস প্লুগিন, ই-কমার্চ প্লুগিন ইত্যাদি
· Theme Forest – HTML ওয়েবসাইট টেমপ্লেট, ওয়ার্ডপ্রেস টেমপ্লেট, জুমলা টেমপ্লেট, ই-কমার্চ ওয়েব টেমপ্লেট বিক্রয় করতে পারবেন
· PhotoDone – এই ওয়েব সাইট এ আপনি স্টক ফটোগ্রাফ বিক্রয় করতে পারবেন
· 3D Ocean – এই ওয়েবসাইট এ আপনি 3D মডেল বিক্রয় করতে পারবেন
· Audio Jungle – আপনার নিজের কম্পোজ করা মিউজিক বিক্রয় করতে পারবেন
· Video Hive – এই ওয়েবসাইট এ আপনার স্টক ভিডিও অথবা মোশনগ্রাফিক্স টেমপ্লেট বিক্রয় করতে পারবেন
Fiverr
Upwork এর মত আরেকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হল Fiverr। তবে এই মার্কেটপ্লেসের কার্যবলী Upwork এর মত না। এই মার্কেটপ্লেস হল একটি দোকানের মত। একটি দোকানে যেমন সকল ধরনের পণ্য থাকে কাস্টমার বা গ্রাহক যা প্রয়োজন তা ক্রয় করে নিয়ে যায় ঠিক তেমনি Fiverr -এ ফ্রীলেন্সাররা নিজের কাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দিয়ে “গিগ” তৈরি করে। ক্লায়েন্টের যেই সার্ভিস প্রয়োজন সেই সার্ভিসের একটি গিগ ক্রয় করে ফ্রীলেন্সারদের হায়ার করে। প্রতিটি গিগের সর্বনিন্ম মূল্য ৫ ডলার। এই মার্কেটপ্লেসে সকল ধরনের কাজ এর গিগ খোলা যায় যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, PowerPoint Presentation, ডিজিটাল মার্কেটিং(এসইও, এসএমএম, ইমেইল মার্কেটিং), ল্যান্ডিং পেজ তৈরি, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
99 Design
৯৯ ডিজাইন অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে ভিন্ন একটি মার্কেটপ্লেস। এটি মুলত ডিজাইনারদের জন্য একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। যারা ডিজাইন করতে পারে যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ফেসবুক কভার ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডিজাইন ইত্যাদি তাদের জন্য এই মার্কেটপ্লেস। এখানে কোন কাজের বিড করতে হয় না। এখানে Client তার প্রয়োজন মত ডিজাইনের তথ্য উল্লেখ করে ডিজাইনাররা সেই তথ্য অনুযায়ী ডিজাইন করে তা জমা করে। যার ডিজাইন Client এর ভালো লাগে তাকে সে জব পোষ্ট করার সময় উল্লেখিত মূল্য প্রদান করে। বিষয়টি প্রতিযোগিতার মত। ৯৯ ডিজাইন অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে ভিন্ন একটি মার্কেটপ্লেস। এটি মুলত ডিজাইনারদের জন্য একটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস। যারা ডিজাইন করতে পারে যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ফেসবুক কভার ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডিজাইন ইত্যাদি তাদের জন্য এই মার্কেটপ্লেস। এখানে কোন কাজের বিড করতে হয় না। এখানে Client তার প্রয়োজন মত ডিজাইনের তথ্য উল্লেখ করে ডিজাইনাররা সেই তথ্য অনুযায়ী ডিজাইন করে তা জমা করে। যার ডিজাইন Client এর ভালো লাগে তাকে সে জব পোষ্ট করার সময় উল্লেখিত মূল্য প্রদান করে। বিষয়টি প্রতিযোগিতার মত।
Freelancer
অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে পুরাতন একটি মার্কেটপ্লেসের নাম হল Freelancer। এই মার্কেট প্লেসে বিভিন্ন ধরণের অনেক জব রয়েছে। আপনি আইটির প্রায় সকল সেক্টরের জব পাবেন এই মার্কেটপ্লেসে। আইটি ছাড়াও আরও অনেক ধরনের জব রয়েছে এই মার্কেটপ্লেসে যেমনঃ একাউন্টিং। এখানে আবেদন করাও সহজ। এখানে একাউন্ট করতে কোন প্রকার ফি লাগে না। তবে ফ্রী মেম্বারশিপ একাউন্টের মাধ্যমে মাসে ৮ টার বেশি জবে বিড করা যায় না। এই মার্কেটপ্লেসে প্রচুর পরিমান জব সাবমিট হয়। তাই সকল রকমের আইটি জব পাওয়া যায় এবং সাথে সাথে আইটি এর বাইরেও জব পাওয়া যায়।
RentACoder
রেন্ট-এ-কোডার এ প্রায় দুই লক্ষ কোডার রেজিস্ট্রেশন করেছে। এই সাইটে প্রতিদিনই প্রায় ২৫০০ এর উপর কাজ পাওয়া যায়। সাইটের সার্ভিস চার্জ বা কমিশন হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১৫% যা কাজ সম্পন্ন হবার পর কোডারকে পরিশোধ করতে হয়। এই প্রতিবেদনটি মূলত রেন্ট-এ-কোডার সাইটকে ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তবে মূল ধারনা প্রতিটি সাইটের ক্ষেত্রেই প্রায় একই।
GetAFreelancer
এই সাইটে মোট কোডার বা প্রোভাইডারের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাত লক্ষ। এই সাইটেও প্রায় ২৫০০ এর উপর কাজ প্রতিদিন পাওয়া যায়। সাইটির সার্ভিস চার্জ হচ্ছে প্রতিটি কাজের মোট টাকার ১০%। তবে গোল্ড মেম্বারদের জন্য কোন সার্ভিস চার্জ নেই। গোল্ড মেম্বার হতে প্রতি মাসে আপনাকে মাত্র ১২ ডলার পরিশোধ করতে হবে। নতুন ইউজারদের জন্য এই সাইটে ট্রায়াল প্রোজেক্ট নামে একটি বিশেষ ধরনের কাজ পাওয়া যায় যাতে শুধুমাত্র নতুন কোডারাই বিড করতে পারবে। ফলে প্রথম কাজ পেতে আপনাকে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
Joomlancers
এই সাইটে শুধুমাত্র Joomla এর কাজ পাওয়া যায়। Joomla হচ্ছে একটি ওপেনসোর্স কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। যারা Joomla এ পারদর্শী তারা এই সাইটে বিড করে দেখতে পারেন। এখানে প্রায় ৫৫০০ ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন করেছে আর এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টি কাজ পাওয়া যায়। এই সাইটে কমিশন হিসেবে প্রতিটি কাজের ১০% টাকা কোডারকে পরিশোধ করতে হবে। গোল্ড মেম্বার হতে হলে আপনাকে প্রতি মাসে ৫০ ডলার প্রদান করতে হবে।
কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট : http://www.GetACoder.com, http://www.Scriptlance .com , পিটিসি, পিটিএস, জববয়, মাইক্রোওয়াকার্স
ডাটা এন্ট্রির কাজ পাওয়ার জন্যে উল্লেখযোগ্য ওয়েবসাইটগুলো হচ্ছে মেগাটাইপাস ডটকম, ক্যাপসাটুক্যাশ ডটকম, গোগিটসাম ডটনেট ইত্যাদি।
ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু অসুবিধা
১) নিজের মেধার পূর্ণ ব্যবহার না করা।
২) আরেকটা অসুবিধা হচ্ছে কাজের পরিবেশ ও একাকীত্ব।
৩) বাংলাদেশে এই পেশাটি এখনও সামাজিকভাবে তেমন একটা স্বীকৃতি পায় নি। তবে দ্রুতই মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যাচ্ছে।
৪) শেষ অসুবিধাটা হচ্ছে রাত জাগা।
৫)কাজ করার সুনির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, ক্লায়েন্ট যখন চাইবেন তখনই তাকে কাজের অগ্রগতি দেখাতে হবে। এটি আপনার প্রাত্যহিক ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
৬)সব ক্লায়েন্টের প্রতিশ্রুতি এক রকম থাকে না, কাজ শেষ হয়ে গেলেও কেউ কেউ সম্পূর্ণ পে-মেন্ট প্রতিশ্রুত সময়ের চেয়ে দেরিতে দেন।
৭)যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং করছেন তাদের মাসিক আয় যথেষ্ট পরিমাণে ওঠানামা করতে পারে।
বিবেচ্য বিষয়
১. ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্টগুলোর একটি বড় অংশ আসে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে, তাদের সাথে আমাদের সময়ের পার্থক্য ৫ থেকে ১২ ঘন্টা। সহজ প্রজেক্টগুলো পোস্ট হবার প্রায় সাথে সাথেই বিডিং শুরু হয়ে যায়। তাই আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের শুরুতে রাতের বেলা বিড করতে হবে।
২. কাজটি জেনুইন কিনা বুঝতে সবার আগে যিনি প্রজেক্টটি পোস্ট করেছেন তার অ্যাকাউন্টটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন। তার সম্পর্কে অন্যদের ফিডব্যাকগুলো দেখে নিন। তিনি পেমেন্ট ভেরিফাইড কিনা সেটা দেখুন। বিড করার পর প্রজেক্ট পেয়ে গেলে তাকে প্রশ্ন করুন যে তিনি কিভাবে পে-মেন্ট দিতে চান, কবে দিতে পারবেন।
৩. ভালো ক্লায়েন্ট ধরে রাখার চেষ্টা করুন। সব ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আপনি একই ব্যবহার পাবেন না, যার ব্যবহার ভালো তাকে ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। ভবিষ্যতে তার হাত ধরেই আপনি ভালো প্রজেক্ট পেতে পারেন।
৪. আপনি যেই মার্কেটপ্লেসে কাজ করছেন সেখানে Escrow সার্ভিস থাকলে সেটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। Escrow হল মার্কেটপ্লেসে টাকা জমা রাখার একটি সার্ভিস যা কাজের শেষে আপনার পারিশ্রমিক পাওয়া নিশ্চিত করে। কোনো একটি প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলার সময় আপনি ক্লায়েন্টকে অনুরোধ করতে পারেন পারিশ্রমিকের পুরো টাকাটি Escrow তে জমা রাখতে। Escrow তে একবার টাকা রাখার পর তা ক্লায়েন্ট ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। প্রজেক্টের কাজ শেষ হয়ে গেলে তিনি Escrow থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা Discharge করে দিবেন। যদি আপনার ক্লায়েন্ট টাকা না দেন, তাহলে এই Escrow সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার পাওনা টাকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী করতে পারবেন।
৫. কোনো কোনো প্রজেক্টের জন্য Employer ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা রাখেন। যেসব প্রজেক্টের জন্য ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেছে সেগুলোতে বিড না করাই ভালো, কারণ ইন্টারভিউ যেহেতু শুরু হয়ে গেছে, সুতরাং সেগুলো থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
৬. কাজের চাপ সামাল দিতে শিখুন। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সব সময় কাজের চাপ সমান থাকে না। যখন চাপ অনেক বেশি থাকে তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে একটি ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। সময়ানুবর্তীতা বজায় রাখুন।
৭. আধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকে চোখ রাখুন। সব সময় আপনার কাজের মান উন্নয়ন করতে চেষ্টা করুন। এটি আপনার ভাল প্রোফাইল ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
৮. সহসাই কোনো প্রজেক্টের প্রস্তাব গ্রহণ না করে একটু ভেবে দেখুন কাজটি আপনি ১০০ ভাগ সম্পূর্ণ করতে পারবেন কিনা।
৯. কোনো কোনো মার্কেটপ্লেসে বিডিং করার সময় একটি Cover letter দিতে হয়। এক্ষেত্রে Cover letter টি প্রাসঙ্গিক, হতে হবে। সব কয়টি Cover letter এ একই ধরনের Template ব্যবহার করবেন না। চেষ্টা করুন আপনার সব কয়টি Cover letter নিজে থেকে বানাতে, এতে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে।
১০. আপনার কাজের জায়গাটি সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। কাজের মাঝে বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না। আপনার প্রাত্যহিক কাজগুলো মনে রাখতে একটি ছোটো নোটবুক সাথে রাখতে পারেন।
১১. ক্লায়েন্টের সাথে যেকোন ধরনের যোগাযোগ অথবা অডিও/ভিডিও ইন্টারভিউ এর সময় পেশাদারী পোশাক এবং ব্যবহার বজায় রাখুন।
১২. আপনার কাজ ক্লায়েন্টের পছন্দ হয়েছে কি-না তা জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না। ক্লায়েন্টের feedback থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
সুন্দর ক্যারিয়ারের জন্য এখনই প্রস্তুতি নিন। নিজেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের জন্য দক্ষ করুন। নিজের এবং পরিবারের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেই অবদান রাখতে পারবেন। একদিন নিজের সফলতার গল্প সবাইকে শুনাতে পারবেন।
তথ্যঃ ওয়েব, সংকলকঃ জিয়া, তারিখঃ ০৯/০৫/২০১৭ ইং